Sunday, February 22, 2009

Bangladeshi Manipuris in The 21st February 2009 (Ekushey February)





























নুপী লান বা নারী বিদ্রোহ-এর অন্তর্নিহিত বক্তব্য

নুপী লান বা নারী বিদ্রোহ-এর অন্তর্নিহিত বক্তব্য


১৮৯১ সালের ২৫ এপ্রিল খোংজোম তীরে ইঙ্গ-মনিপুরি যে যুদ্ধ হয় তাতে পরাজিত হয় মনিপুর বাহিনী এবং এর তৃতীয় দিনেই অর্থাৎ ২৭ শে এপ্রিল তারিখে মনিপুর রাজ্য পুরোপুরিভাবে বৃটিশ শাসনের অন্তর্গত হয়। মহারাজ কুলচন্দ্র সিংহ ২০০ অনুচরসহ চীনদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্ট করেন। কিন্তু কতিপয় সহযোগীর বিশ্বাসঘাতকতায় বন্দী হন বৃটিশদের হাতে। অচিরেই ধরা পড়েন বীর টিকেন্দ্রজিৎ এবং থাঙ্গাল জেনারেলকে বৃটেনের মহারানীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহের অপরাধে বিচার করে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয় যা ১৮৯১ সালের ১৩ই আগষ্ট তারিখে প্রকাশ্য জনসমক্ষে পোলো গ্রাউন্ডে কার্যকর করা হয়। এর আগে ভিন্ন ভিন্ন অভিযোগে এন. সুবেদার, কাজাও সিংহ এবং জেনারেল থাঙ্গালকেও ফাঁসি দেয়া হয়। আবার অনেককে দেয়া হয় নির্বাসন। এভাবেই স্বাধীন মনিপুরের একচ্ছত্র শাসনক্ষমতা দখল করে নেয় বৃটিশ সরকার।

মনিপুর বৃটিশ শাসনের অধীন হলেও বৃটিশ শাসিত ভারতের সাথে একীভূত হয়নি বরং স্বতন্ত্র মর্যাদা নিয়ে তার অবস্থান অক্ষুন্ন রাখে। কিন্তু মনিপুরের শাসনব্যবস্থা বৃটিশ সরকারের প্রত্যক্ষ নির্দেশ-আদেশের মাধ্যমে পরিচালিত হতে থাকে। মাত্র ৫ বছর বয়সী রাজপুত্র চূড়াচান্দ'কে রাজসিংহাসনে বসানো হয়। মনিপুরি প্রজাবৃন্দ এসময় নানা সমস্যাদির মুখোমুখি হতে থাকে।

১৮৯১ সালের ২১ আগষ্ট, বৃটিশ সরকার মনিপুর শাসনের ক্ষেত্রে কিছু নীতিমালা ঘোষণা করে কিন্তু মনিপুরি প্রজাবৃন্দ তা প্রত্যাখ্যান করে। ফলে বৃটিশরা মনিপুরি সৈন্যদের উপযুক্ত অস্ত্র-শস্ত্র না দিয়ে আলাদা করে রাখে এবং বৃটিশ সৈন্যদের আজ্ঞাবাহী করে রাখে। মনিপুরি সৈন্যদের 'খুজুমা' থেকে 'কোহিমা' পর্যন্ত দীর্ঘ ৭২ মাইল রাস্তায় বিনা পারিশ্রমিকে বৃটিশ সৈন্যদের রেশন বহন করার কাজে নিয়োজিত করে। শুধু তাই নয়, নানাবিধ কায়িক শ্রমে মনিপুরিদের নিয়োজিত করে। যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ হিসেবে মনিপুরিদের কাছ থেকে ২,৫০,০০০ টাকা আদায় করে। এমনকি মনিপুরি প্রজাদের উপর মাথাপিছু সমতলে ২ টাকা এবং পাহাড়ে ৩ টাকা করে ট্যাক্স ধার্য করে। আর এর ফলে মনিপুরী প্রজাবৃন্দ নিজেদেরকে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক বলে ভাবতে শুরু করে এবং একটা ক্ষোভ ক্রমশ: দানা বেঁধে উঠতে থাকে।

মনিপুরি প্রজাবৃন্দ সবচেয়ে বেশী সমস্যার সম্মুখীন হন যখন বৃটিশ সরকার মনিপুরে 'ফ্রি ট্রেড পলিসি' চালু করে। এর আওতায় মনিপুর থেকে বছরে ৩৫,০০০ মণ চাল রপ্তানী করা হয়। ফলে মনিপুরে চালের মূল্যবৃদ্ধি ঘটে। ক্ষুব্ধ মনিপুরিরা ১৯০৪ সালের ৬ই জুলাই তারিখে খাইরম্বন্দ বাজারের ২৮টি দোকানঘর পুড়িয়ে দেয়। ঐ মাসেরই ১৫ তারিখে Captain Nattal এবং Dulop এর বাংলো বাড়ী রাতের অন্ধকারে পুড়িয়ে দেয়। ৪ঠা আগষ্টে আবার আরেকটি বাংলোতে আগুন লাগানো হয়। এভাবেই বৃটিশ শাসনে বিক্ষুব্ধ মনিপুরি প্রজাবৃন্দ হিংসাত্মক প্রতিরোধের পথ বেছে নেয়। আর বৃটিশ সরকারও আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিদেরকে বন্দী করার উদ্যোগ নেয়।

তাছাড়া আগুনে ভস্মীভূত বাংলোগুলো নিজ খরচে নির্মাণ করে দেয়ার জন্যে ইম্ফাল শহরের মনিপুরী প্রজাদের উপর মি. ম্যাক্সওয়েল হুকুমনামা জারি করেন ৩০শে সেপ্টেম্বর। এই আদেশে মনিপুরিদের ক্ষোভ আরো বেড়ে যায়। শগোলবন্দ এলাকার জনৈক চীংচাবা নাতেক সিংহ ম্যাক্সওয়েল সাহেবের এই অন্যায় আদেশ রহিত করার জন্য আবেদন জানান। কিন্তু ম্যাক্সওয়েল তার আবেদনে সাড়া নি দিলে তাৎক্ষণিক মূহুর্তে প্রায় ৫০০০ লোকের এক বিশাল প্রতিবাদ সমাবেশ 'বিচারালয়' প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হয় এবং ঐ সমাবেশে বৃটিশ সরকারের ঐ আদেশ নাকচ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৃটিশ সৈনরা সমাবেশ ভেঙ্গে দেয় এবং নেতৃস্থানীয় ৬ জনকে বন্দী করে। তারা হলেন-
১. মেঘজিৎ সিংহ (৫৬)
২. থাংকোকপা সিংহ (৫০)
৩. মুতুম সিংহ (৬১)
৪. কালা সিংহ (৫৬)
৫. সেনাচাওবা সিংহ (৩৭) ও
৬. দেবেন্দ্র সিংহ (৩১)।
তারা সবাই ছিলেন রাজপরিবারের সদস্য এবং তাদেরকে বিচারের পর মনিপুরের বাইরে নির্বাসনে পাঠিয়ে দেয়া হয়। বৃটিশ সরকারের এই দমন পীড়নে ক্ষুব্ধ সাধারণ মনিপুরিরা শেষ পর্যন্ত বাধ্যতামূলক বিনা পারিশ্রমিকে অগ্নিদগ্ধ বাংলোগুলো পুননির্মাণ করে দিতে বাধ্য হয়।

বৃটিশ বাহিনীর এই ক্রমাগত অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে মনিপুরি নারীরা তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে। এই আন্দোলন সেপ্টেম্বরের ৩ তারিখ থেকে শুরু হয়ে বেশ কয়েকদিন চলে। আন্দোলনের তীব্রতা বেড়ে গেলে বৃটিশরা মনিপুরের বাইরে থেকে সৈন্য আমদানী করে মনিপুরে সেনাসংখ্যা বাড়িয়ে দেয়। এই নারী জাগরণে মূখ্য ভূমিকা পালন করে-
১. ইরেংবম সনাজাওবী দেবী
২. লৈশাংথেম খাথবী
৩. লৈমাপোকপম থবলি এবং
৪. লাইশ্রম জুবতি দেবী।

বৃটিশ সরকার নির্যাতনের পথ বেছে নেয়, অনেক নারী নেত্রীই সরকারী বাহিনীর নিষ্ঠুর নির্যাতনে আহত হয়। তবু মনিপুরি নারীদের গড়ে ওঠা আন্দোলন ক্রমশ: তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে ওঠার পর সরকারী শাসন ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। অবশেষে বাধ্য হয়ে বৃটিশ সরকার তাদের আদেশ প্রত্যাহার করে নেয়। আর এভাবেই মনিপুরি নারীদের আন্দোলন প্রাথমিক বিজয় অর্জন করে। মনিপুরি ইতিহাসের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এক সুদূরপ্রসারী প্রভাব সৃষ্টিকারী এই আন্দোলন প্রথম 'নুপী লান' বা মনিপুরি নারী বিদ্রোহ নামে পরিচিতি লাভ করে।

প্রথম নুপী লান বা নারী বিদ্রোহ মনিপুরি নারীদের মধ্যে ধৈর্য্য ও সাহসিকতার এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। আর এর ফলে বৃটিশ শাসনামলে নানা অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে মনিপুরি নারীরাই বারে বারে গড়ে তুলেছে প্রতিরোধ আন্দোলন। মনিপুরে 'ফ্রি ট্রেড পলিসি' চালু হওয়ার পর থেকেই চালের দাম বেড়ে যায়। কারণ এই কর্মসূচীর অধীনে মনিপুর থেকে প্রচুর চাল বাইরে পাঠানো হয়। ১৮৯৭-৯৮ সালে ২৫,২৩০ মণ চাল রপ্তানী করা হয়। পরবর্তী বছর ১৮৯৮-৯৯ সালে এই রপ্তানীর পরিমাণ ছিল ৩৬,৪৩৬ মণ। ১৯২২-২৩ সালে চাল রপ্তানী হয় ৮০,০০০ মণ।১৯২৫-২৬ সালে এই পরিমাণ হঠাৎ করে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ১,৫৫,০১৪ মণ। এভাবে প্রতি বছরে রপ্তানীর এই পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে ১৯৩১-৩২ সালে ২,৭৭,৩৮৯ মণ এবং ১৯৩৭-৩৮ সালে ৩,৭২,১৭৪ মণে দাঁড়ায়। কিন্তু জমির পরিমাণ সেই অনুপাতে বৃদ্ধি পায়নি। ১৯২৫-২৬ সালে জমির পরিমাণ যেখানে ছিল ১,৭৫,৫৩৭ একর সেখানে ১৯৩৭-৩৮ সালে তা মাত্র ১০,৩২২ একর বেড়ে ১,৮৫,২১৩ একরে দাঁড়ায়। একারণেই উৎপাদন বৃদ্ধির তুলনায় অনেক বেশী পরিমাণ চাল বাইরে রপ্তানী করা হতো বলে দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং মনিপুরি জনগণের সার্বিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকে।

এসময় মনিপুরি নারীরা মনিপুর থেকে চাল রপ্তানী বন্ধ করার জন্য আন্দোলন গড়ে তোলে। ১৯৩৯ সালে দীর্ঘমেয়াদী খরা এবং ফসলতোলার আগে প্রচন্ড শিলাপাতের কারণে ফসলহানি ঘটে। তারপরও মারোয়ারী/মারওয়ারী ব্যবসায়ীরা কমদামে ধান ক্রয় করে মেশিনে ভাঙিয়ে চাল রপ্তানী করা অব্যাহত রাখে। আগে যেখানে চালের দাম ছিল মণ প্রতি চার আনা সেখানে তা বৃদ্ধি পেয়ে দু'টাকায় দাঁড়ায়। কেবল দাম আকস্মিক বৃদ্ধিই নয়, চাল প্রায় দুষ্প্রাপ‌্য হয়ে ওঠে। একধরনের দূর্ভিক্ষাবস্থা বিরাজ করে। এমনি অবস্থায় 'তেরা কৈথেল' (তেরা বাজার) এর অরিবম চাওবীতোন দেবীর নেতৃত্বে প্রথম একদল মনিপুরি নারী রপ্তানীর জন্য আনা ধান-চাল আটক করে এবং চালের কল বন্ধ করার জন্যে সরকারের কাছে আবেদন জানায়। পরে প্রায় এক হাজার নারী খ্বাইরম্বন্দ বাজারে সমবেত হয়ে পলিটিক্যাল এজেন্ট মি. গিমসনের অফিস ঘেরাও করে এবং চাল রপ্তানীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। তারা 'মনিপুর ষ্টেট দরবার' এর প্রসিডেন্ট মি. টি এ শার্প'কে ঘেরাও করে রাখে এবং চালের কল ও রপ্তানী বন্ধ করার জন্য চাপ দেয়।

আন্দোলনকারী নারীদের সংখ্যা ক্রমশ: বাড়তে থাকে এবং দ্রুত ৪,০০০ ছাড়িয়ে যায়। তারা টি এ শার্প'কে টেলিগ্রাম অফিসে নিয়ে যায় নবদ্বীপে অবস্থানরত মহারাজের কাছে জরুরী টেলিগ্রাম বার্তা পাঠিয়ে রপ্তানী বন্ধের জন্য। টেলিগ্রাম বার্তায় তারা আরও জানায় যে তাদের দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত টি এ শার্প, মেজর কামিন্স, মেজর বুলফিল্ড সহ টেলিফোন অফিসের কর্মচারীদেরকে ঘেরাও করে রাখবে। আন্দোলনকারী নারীদেরকে ছত্রভঙ্গ করার জন্যে দ্রুত সেখানে পৌছে য়ায় 'আসাম রাইফেল' এর এক প্লাটুন সৈন্য। কিন্তু নারীরা পিছপা হয়নি। বরং আন্দোলনের তীব্রতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। এক পর্যায়ে মুখোমুখি সংঘর্ষ বেঁধে যায়। সৈন্যরা বেয়নেট এবং বন্দুকের বাট দিয়ে আঘাত করতে থাকে এবং এর ফলে প্রায় ৩০জন আন্দোলনকারী আহত হয়। এদের মধ্যে ১০ জনের অবস্থা ছিল গুরুতর এবং তাদেরকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

১৪ই ডিসেম্বর তারিখে হৈরোক এবং ওয়াংজিং থেকে ১৮জন নারী নেত্রীকে গ্রেফতার করা হয়। এখবর ছড়িয়ে পড়লে পরদিন ১৫ই ডিসেম্বর মনিপুরি নারীরা এক প্রতিবাদ সভা করে এবং গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি দাবী করে মিছিল নিয়ে রওয়ানা হয় জেল অভিমুখে। সেখানে জেল গেটে পুলিশ লাঠিচার্জ করলে আন্দোলনকারী নারীরাও লাঠি হাতে প্রতিরোধ করে।

ডিসেম্বরের ১৬ তারিখে বিচারালয়ের সামনে এক বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেই সমাবেশ থেকে পুলিশের ইন্সপেক্টর কর্তৃক একজন নারী নেত্রীর লাঞ্ছিত হওয়া, ১৫ তারিখের মিছিলে লাঠিচার্জ এবং একজন চাল ব্যবসায়ী কস্তুরীর ছেলে কর্তৃক নারী নেত্রীদের বিরুদ্ধে অশোভন উক্তির প্রতিবাদে বিচার দাবী করা হয়। ডিসেম্বরের ২৫ তারিখে আটককৃত নেত্রীবৃন্দকে বিচারের জন্য কোর্টে নিয়ে আসা হলে আন্দোলনকারীরা সেখানে আক্রমন করে বিচার সভা বানচাল করে দেয়। তারপর একজন বৃটিশ কর্মকর্তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে টেলিগ্রাম অফিস থেকে নবদ্বীপে অবস্থানরত মহারাজের কাছে টেলিগ্রাম প্রেরণ করানো হয়। খবর পেয়ে আসাম রাইফেলস এর একদল সৈন্য এসে আন্দোলনকারীদেরকে লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। সরকারী বাহিনীর সাথে মুখোমুখি যুদ্ধের সময় কাংজম সনাজাওবী লৈমা সহ বেশ ক'জন নেত্রী আহত হন।

শুধু তাই নয়, আন্দোলনকারী নারীরা রোড ট্যাক্স, যানবাহনের ট্যাক্স সহ বিভিন্ন ট্যাক্স বন্ধ করা, বহিরাগত ব্যবসায়ীদের বিক্রি করা কাপড় না কেনা, দালালদের কাছে কোন ধরনের জিনিসপত্র বিক্রি না করাসহ বিভিন্ন দিক দিয়ে সরকারের প্রতি বিদ্রোহ শুরু করে।

একুশের প্রভাতফেরীতে ঢাকাবাসী মনিপুরি






"আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও মহান একুশে ফেব্রুয়ারী অমর হোক"


মাতৃভাষার স্বীকৃতি ও তাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার দাবীতে ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারী মাতৃসন্তানদের রক্তদান ও আত্মাহুতির চূড়ান্ত স্বীকৃতি আজকের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস কেবল 'বাংলা'ভাষাকে নয়, পৃথিবীর সমস্ত ভাষার অস্তিত্বকে স্বীকৃতি দিয়েছে। একুশের চেতনা তাই মানুষের অস্তিত্ব ও অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সংরক্ষণের মূলমন্ত্র। একুশের এই সংগ্রামে যারা রক্ত ও আত্মাহুতি দিয়েছেন তাদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করছি। ইউনেস্কো কর্তৃক নভেম্বর ১৭, ১৯৯৯ তারিখ ২১শে ফেব্রুয়ারীকে "আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস" হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার পর ২১শে ফেব্রুয়ারী ২০০০ সাল হতে অদ্যাবধি প্রতিবছর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আমার গভীর গভীর শ্রদ্ধার সাথে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমে এদিনটিকে পালন করে আসছি।

পৃথিবীর অপরাপর ভাষার ন্যায় মনিপুরি ভাষাও এক প্রাচীন ভাষা। যার প্রাচীন নাম 'মীতেইলোন' বা 'মেইতেই লোন' । এই ভাষার রয়েছে এক সমৃদ্ধ ঐতিহ্য ও সাহিত্য। উৎস বিচারে এই ভাষা মঙ্গোলীয় মহাপরিবারের অন্তর্ভুক্ত এবং এর উৎপত্তি আজ থেকে প্রায় ৩৪০০ বছর আগে। প্রাচীনতার দিক থেকে মনিপুরি সাহিত্যের স্থান ভারতীয় প্রাচীন সাহিত্য কর্ম কৃষ্ণ যজুর্বেদের পরেই। মনিপুরি ভাষা সাহিত্যের সৃষ্টি সমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থ যেমন: ওগ্রী, খম্বাথোইবী ইত্যাদি।

মনিপুরি জনগোষ্ঠী পৃথিবীর অন্যান্যস্থানে বসতিস্থাপন ছাড়াও ঢাকা শহরের তেজগাও অঞ্চলে বসতি স্থাপন শুরু করে সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথম দশকে। কিন্তু কালের ক্ষয়িঞ্চু ধারায় এই জনগোষ্ঠী ক্রমে ক্রমে বিলুপ্ত হয়ে আজ কেবল স্মৃতি হয়েই ইতিহাসের নীরব স্বাক্ষী হিসেবে রয়ে গেছে স্থানটুকু।

মনিপুরি ভাষার নিজস্ব বর্ণমালা রয়েছে। ঐতিহাসিকদের মতে মনিপুরি লিপি প্রবর্তিত হয় মহারাজ পাখংবার শাসনামলে (৩৩-৩১৫ খৃ। তখন বর্ণ সংখ্যা ছিল ১৮টি। পরবর্তীতে মহারাজ খাগেম্বার শাসনামলে আরো ৯টি নতুন বর্ণ সংযোজিত হয়। বর্তমানে মোট বর্ণমালার সংখ্যা হচ্ছে ২৭টি। কিন্তু অষ্টাদশ শতাব্দীতে রাজা পামহৈবার শাসনামলে (১৭০৯-১৭৪৮ খৃ শ্রী শ্রী চৈতন্য প্রবর্তিত 'বৈষ্ণব' ধর্ম তৎকালীন মনিপুর রাজ্যের রাষ্ট্রীয় ধর্মরুপে গৃহীত হওয়ার পর বাংলালিপি দখল করে নেয় মনিপুরি লিপির স্থান। সেই থেকে মনিপুরি ভাষা বাংলা হরফেই লিখিত হয়ে আসছে। সম্প্রতি বিলুপ্ত মনিপুরি লিপির পুন:ব্যবহার ও প্রচলন শুরু হয়েছে।





প্রভাতফেরীতে অংশগ্রহন:

ঘড়ির কাটা যখন ঠিক ৭:০০ ছুই ছুই তখন পূর্ব পরিকল্পনানুযায়ী পলাশীর মোড়-এ জড়ো হতে থাকে ঢাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মনিপুরিরা। হালকা হালকা শীত করছিল। জনলোকারণ্যে একে একে ছেয়ে যায় পলাশী মোড়। শিশু কিশোরদের কপালে, গালে বিভিন্ন লেখা শোভা পাচ্ছিল। কেউবা মাথায় অমর একুশের শহীদ মিনার সম্বলিত বেল্ট কেউবা জাতীয় পতাকা কেউবা স্টিকার লাগিয়ে দাড়িয়ে আছে। অন্যরকম অনুভূতি, অন্যরকম এক আনন্দ ছেয়ে যায় মন ও মননে।

তারপর একে একে যখন আমাদের পরিচিত সবাই এসে গেলো তখন আমরা মহান একুশে ফেব্রুয়ারীর সারিবদ্ধ প্রভাতফেরীর লাইনে। আমাদের উঁচু ঝান্ডায় লেখা বড় বড় করে লেখা 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও মহান একুশে ফেব্রুয়ারী অমর হোক', সৌজন্যে 'ঢাকাবাসী মনিপুরি'। আর এই উঁচু ঝান্ডা বহন করে নিয়ে যাচ্ছিল আমারই দুই সহপাঠী বন্ধু।

আমরা যখন শহীদ মিনারের খুব কাছে চলে এলাম তখন সত্যি অন্যরকম এক শীতলতা বিরাজ করছিল মনে। সামনেই স্তুপাকারে (নিবেদিত/অর্পিত)বিশাল ফুলের সমাহার। তারপর আমাদের দুই বন্ধু পুষ্পস্তবক অর্পন করল, আমাদের প্রত্যেকের হাতে এক একটি করে ফুলের তোড়া ছিল, কারো কারো দুটো.. একে একে আমরা সবাই শ্রদ্ধা নিবেদন করলাম..

তারপর সেখান থেকে বেরিয়ে আমরা সোহরাওর্য়াদি উদ্যানে মিলিত হয়ে একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা পর্বের আয়োজন করি। সেখানে অনেক অজানা তথ্যও বেরিয়ে আসে, জানা হয় সবার..

Monday, February 16, 2009

Centre for Manipuri Studies (CMS)

Centre for Manipuri Studies (CMS_BD) বাংলাদশেরে মনিপুরি তরুণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রথমবারের মতো দিনব্যপী একটি সেমিনার আয়োজন করে আদমপুরের একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে। তারই কিছু ছবি এখানে পোস্ট করা হল..









Friday, February 13, 2009

মনিপুরি ভাষায় বাংলা কবিতা পাঠ

বাংলা ভাষার অপরাপর ভাষাগুলোর ন্যায় মনিপুরি ভাষা বা মীতৈ লোন বা মৈতৈ লোন অন্যতম একটি ভাষা। এ ভাষায় কথা বলে বা ভাষাভাষীর সংখ্যা প্রায় এক কোটি। শুধুমাত্র বাংলাদেশেই এ ভাষাভাষীর সংখ্যা প্রায় সত্তুর হাজার। বিশ্ব সাহিত্যের প্রাচীন সাহিত্য কর্মের মধ্যে এ ভাষার সাহিত্যও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এ ভাষায় অনূদিত হয়েছে প্রায় বিশ্বের সকল মৌলিক সাহিত্যকর্ম। বাংলাদেশেও মনিপুরি সাহিত্য বিশেষভাবে উল্লেখ করার মতো কারণ ইতোমধ্যেই কিছু কিছু কাজ বাংলা সাহিত্যাকাশে অত্যন্ত প্রশংসিত হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় এখানে বাংলা সাহিত্যের ক'জন উজ্জ্বল নক্ষত্রের বাংলা কবিতার অনুবাদ দেয়া হলো, পাশাপাশি পাঠকের সুবিধার্থে বাংলা কবিতাটিও পত্রস্থ করলাম। পত্রস্থিত কবিতাগুলো মুতুম অপু সিংহ সম্পাদিত এক বসন্তের ভালোবাসা নামক দ্বি-মাত্রিক কাব্যগ্রন্থ হতে সংকলিত - মাইবম।



জীবনানন্দ দাশ

আকাশলীনা

সুরঞ্জনা, ওইখানে যেওনাকো তুমি,
বোলো নাকো কথা অই যুবকের সাথে ;
ফিরে এসো সুরঞ্জনাঃ
নক্ষত্রের রুপালী আগুন ভরা এ রাতে ;

ফিরে এসো এই মাঠে, ঢেউয়ে ;
ফিরে এসো হৃদয়ে আমার ;
দূর থেকে দূরে - আরো দূরে
যুবকের সাথে তুমি যেয়ো নাকো আর।

কি কথা তার সাথে ? তার সাথে।
আকাশের আড়ালে আকাশে
মৃত্তিকার মতো তুমি আজঃ
তার প্রেম ঘাস হ'য়ে আসে।

সুরঞ্জনা,
তোমার হৃদয় আজ ঘাসঃ
বাতাসের ওপারে বাতাস-
আকাশের ওপারে আকাশ।



আকাশলীনা

সুরঞ্জনা, মফমদুদা চতখিগনুকো নহাক,
শারুরনু ওয়ারী অমুক পাখং মহাক্কা ;
হল্লক্লো সুরঞ্জনাঃ
থওয়ান মীচাক্কী মঙালনা পুম্লবা অহিংসিদা।

হল্লক্লো লক্ষাংসিদা, ইপোম নায়না ;
হল্লক্লো ঐগী থম্মোয়নুংদা ;
লাপ্পদগী লাপ্না- অতৈগসু লাপথোক্না
পাখংদুগা অমুক চত্খ্রনু নহাক।

করি ওয়ারীনো মহাক্কা ? মাক্কা
আতিয়াগী মরুমদা আতিয়াদা
লৈবাকগুম্না নঙ ঙসিসুঃ
মহাক্কী নুংশিবদি শজিক ওইরক্লে।

সুরঞ্জনা,
নঙগী থম্মোয়দি ঙসি শজিকঃ
নুংশিত্কী ওয়াংমদা নুংশিত্-
আতিয়াগী ওয়াংমদা আতিয়া।


[ভাষান্তর: অয়েকপম বিজন]




শামসুর রাহমান

উত্তর

তুমি হে সুন্দরীতমা নীলিমার দিকে তাকিয়ে বলতেই পারো
'এই আকাশ আমার'
কিন্তু নীল আকাশ কোনো উত্তর দেবেনা।

সন্ধ্যেবেলা ক্যামেলিয়া হাতে নিয়ে বলতেই পারো,
'ফুল তুই আমার'
তবু ফুল থাকবে নীরব নিজের সৌরভে আচ্ছন্ন হয়ে।

জ্যোত্স্না লুটিয়ে পড়লে তোমার ঘরে,
তোমার বলার অধিকার আছে, 'এ জ্যোত্স্না আমার'
কিন্তু চাঁদিনী থাকবে নিরুত্তর।

মানুষ আমি, আমার চোখে চোখ রেখে
যদি বলো, 'তুমি একান্ত আমার', কী করে থাকবো নির্বাক ?
তারায় তারায় রটিয়ে দেবো, 'আমি তোমার, তুমি আমার'।




পাউখুম

ফজরবী নঙনদি অতিয়াদা য়েংঙগা হায়বা ঙমগনি
'আতিয়াসে ঐগীনি'।
অদুবু হিগোক মচুগী আতিয়াদি পাউখুম পিরক্লোই।

সন্ধ্যাওয়াইদা খুত্তা ক্যামেলিয়া পাইরগা হায়বদি ঙমগনি,
'লৈ নঙ ঐগীনি'।
অদুবু লৈদি তুমিন্না মশাগী মনমদা ঙাওদুনা লৈগনি।

নহাক্কী শঙ্গায়দা থাবল চঙক্লবদি,
নহাক্কী হায়বগী হক লৈ 'থাবল নঙ ঐগীনি'
অদুবু থাজদি পাউখুম পিদনা লৈগনি।

ঐদি মীওইবনি, ঐগী মীত্ত্তা মীত্ থম্লগা
হায়রবদি নঙনা 'নঙসে সুপ্নগী ঐগীনি' করম্না তুমিন লৈগনি ?
থওয়ান মিচাক ময়ামদা পাউ চেনগনি 'ঐসে নঙগীনি, নঙসে ঐগীনি'।


[ভাষান্তর: মাইস্নাম রাজেশ]





মহাদেব সাহা


চিঠি দিও

করুনা করেও হলে চিঠি দিও, খামে ভরে তুলে দিও
আঙুলের মিহিন সেলাই
ভুল বানানেও লিখো প্রিয়, বেশী হলে কেটে ফেলো তাও,
এটুকু সামান্য দাবী চিঠি দিও, তোমার শাড়ির মতো
অক্ষরের পাড় বোনা একখানি চিঠি।
চুলের মতোন কোন চিহ্ন দিও বিস্ময় বোঝাতে যদি চাও
সমুদ্র বোঝাতে চাও, মেঘ চাও, ফুল পাখি, সবুজ পাহার
বর্ননা আলস্য লাগে তোমার চোখের মতো চিহ্ন কিছু দিও !
আজো তো অমল আমি চিঠি চাই, পথ চেয়ে আছি,
আসবেন অচেনা রাজার লোক
তার হাতে চিঠি দিও, বাড়ি পৌছে দেবে।
এক কোনে শীতের শিশির দিও এক ফোঁটা, সেন্টের শিশির চেয়ে
তৃণমুল থেকে তোলা ঘ্রান
এমন ব্যস্ততা যদি স্তব্ধ করে একটি শব্দই শুধু লিখো, তোমার কুশল !
ওইতো রাজার লোক যায় ক্যম্বিসের জুতো পায়ে, কাঁধে ব্যাগ,
হাতে কাগজের একগুচ্ছ সীজন ফ্লাওয়ার
কারো কৃষ্ণচুড়া, কারো উদাসীন উইলোর ঝোঁপ কারো নিবিড় বকুল
এর কিছুই আমার নয় আমি অকারন
হাওয়ায় চিত্কার তুলে বলি, আমার কি কোন কিছুই নাই ?
করুনা করেও হলে চিঠি দিও, ভুলে গিয়ে ভুল করে একখানি
চিঠি দিও খামে
কিছুই লেখার নেই তবু লিখো একটি পাখির শিস
একটি ফলের ছোটো নাম,
টুকিটাকি হয়তো হারিয়ে গেছে কিছু পাওনি খুজে
সেইসব চুপচাপ কোনো দুপুর বেলার গল্প
খুব মেঘ করে এলে কখনো কখনো বড় একা লাগে, তাই লিখো
করুনা করেও হলে চিঠি দিও, মিথ্যা করেও হলে বলো
ভালোবাসি।



চিঠি ইরকউ

চানবিদুনা ওইরবসু চিঠি ইরকউ
চেখাউদা হাল্লগা থারকউকো তনৌরবী খুত্ত্তুনা।
ময়েক লাল্লবসু ইরকউকো নুংশিবী, হেঞ্জিনখ্রগা ইবদা কথতলু অমুকসু,
অদুমক্তদা হায়জরিবসিনি- চিঠি ইরকউ, নঙগী লৈফনেকগুম্লবা
ময়েক্কী লৈরোংনা মপাল লোল্লবা চিঠিমত্তং।
চিঠিদুদা ফোঙনিংলগা অংকপা ওয়ারোল য়েক্লকউকো নঙগী অমুবা শম্লাংমত্তং।
সমুদ্র খঙহনগেরা ? লৈ-উচেক-শংবানরাব চীংদোল ?
লীবা তল্লবসু নঙনা য়েক্লকউকো নঙগী অমুবা মিত্স্নাগুম্বা করিনো'মা।
ঐদি ঙসিসু থোত নৌরবা নঙগী খুত্ত্তুনা ইরকপা নুংশিরবী চিঠিমত্তংবু,
খৌরাংনা ঙাইরি তাম্লবা মাইকৈ পাংদুনা, লাক্কনি শক খঙদ্রবা নিংথৌগী মনায়
চিঠি অদু পিরকউ মাঙোন্দা, য়ৌহঞ্জরক্কনি শোয়দনা।
চিঠিগী মচি অমাদা মনম নৃংশিবা সেন্টকী মহুত্তা
হাপ্পকউকো ইংথম থাগী লিক্লা মরিকমত্তং তিংথৌখোংদগী লৌখত্পা মনমগা লোয়ননা।
য়াম্না চিল্লবসু নঙনা ইরকউকো ময়েক অমত্তা ওইরবসু
নঙগী অফা-ফত্তা খঙহন্দুনা।
য়েংঙু, আদা চতলি নিংথৌগী মনাই খাকি ফিজেত্ শেত্ত্তুনা
নাকলদা খাউ অমা য়াল্লগা, খুত্তা চে'গী লৈরাং কয়া পায়দুনা।
কনাগী কৃষ্ণচুড়া - কনাগীনা উইল চবুন অমা কনা অমগীনা নুংশিরবা বকুল
অসি'পূম্বা ঐগীতদি নত্তে
ঐদি অমত্তা য়াওদবরা ?
চানবীদুনা ওইরবসু চিঠি ইরকউ, কাওথোক্তুনা ওইরবসু
চিঠি মত্তং পিরকউকো চেখাউদা হাপ্তূনা।
করিমত্তা হাপনিঙায় লৈত্রবসু , ইরকউকো উচেকমগী খোন্থাং
পিক্ল লৈরাংমগী নুংশি কোলোয়
করিগুম্বা পোত্শক অমা মাঙখিদুনা থিবা ফঙদ্রে
ইরকউকো অদুগুম্বা অরোনবা ওয়ারী কয়া কয়া
কৈদৌনুংদা নোংনা কুইনা চুরক্লগা য়াম্না চিক্না থোকই ইশা ইদোমতা।
অদুননি হায়জবা চিঠি ইরকউ, চানবিদুনা ওইরবসু চিঠি ইরকউ।
চিরোলদুনা ওইরবসু অমুক্তং হায়য়ুকো
নুংশিজৈ।


[ভাষান্তর: এ.কে.শেরাম]





হেলাল হাফিজ


প্রস্থান

এখন তুমি কোথায় আছো কেমন আছো, পত্র দিয়ো।

এক বিকেলে মেলায় কেনা খামখেয়ালীর তাল পাখাটা
খুব নিশীথে তোমার হাতে কেমন আছে, পত্র দিয়ো।
ক্যালেন্ডারের কোন পাতাটা আমার মতো খুব ব্যাথিত
ডাগর চোখে তাকিয়ে থাকে তোমার দিকে, পত্র দিয়ো।
কোন কথাটা অষ্টপ্রহর কেবল বাজে মনের কানে
কোন স্মৃতিটা উস্কানি দেয় ভাসতে বলে প্রেমের বানে
পত্র দিয়ো, পত্র দিয়ো।

আর না হলে যত্ন করে ভুলেই যেয়ো, আপত্তি নেই।
গিয়ে থাকলে আমার গেছে, কার কি তাতে ?
আমি না হয় ভালোবেসে ভুল করেছি, ভুল করেছি
নষ্ট ফুলের পরাগ মেখে
পাঁচ দুপুরে নির্জনতা খুন করেছি, কী আসে যায় ?

এক জীবনে কতোটা আর নষ্ট হবে,
এক মানবী কতোটাই বা কষ্ট দেবে।



তামখ্রবী

নঙ হৌজিক কদায়দা লৈরি করম্না লৈরি, চিঠি পীরকউ।

মেলাগী নুংথিল অমদা লৈখিবা কোন হুমায় অদো
থেংলা অহিংদা নখুত্তা নঙগী করম্না লৈরি, চিঠি পীরকউ।
ক্যালেন্ডারগী করম্বা লমায়না ঐগুম্না য়াম্না নুঙায়তে
মীত্ লংনা য়েংলকই নঙোন্দা, চিঠি পীরকউ।
করম্বা ওয়াহৈনা নুমিত্ চুপ্পা ঙংলি নঙগী থম্মোয় নাফমদা
করম্বা ওয়াখলনা নুংশি ঈহৌদা হি-দৌরি
চিঠি পীরকউ, চিঠি পীরকউ।

নত্রগা তনিক্না কাউবিখো, অয়েত্পা লৈতে।
মাংখ্রবসু ঐগীনি, কনাগী করিনো ?
ঐতনবু নুংশিরুবনা লানখিবনি, শোয়খিবনি
অপত্পা লৈগী লৈহিক তৈরুনা
হাতখিবনি মীচিক মীখোল তাদ্রবা নুমিত্ য়ুংবদা, করি কায়বগে ?

পুন্সি অমনা লৈখা তারবদা কয়াম্না'মুক তাগদগে,
মীওইবী অমনা কয়াম্না'মুক ওয়াহনগদগে ।


[ভাষান্তর: মুতুম অপু]






রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ


এ কেমন ভ্রান্তি আমার

এ কেমন ভ্রান্তি আমার !
এলে মনে হয় দূরে স'রে আছো, বহুদূরে,
দূরত্বের পরিধি ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে আকাশ।
এলে মনে হয় অন্যরকম জল হাওয়া, প্রকৃতি,
অন্য ভূগোল, বিষুবরেখারা সব অন্য অর্থবহ-
তুমি এলে মনে হয় আকাশে জলের ঘ্রান।

হাত রাখলেই মনে হয় স্পর্শহীন করতল রেখেছো চুলে,
স্নেহ- পলাতক দারুন রুক্ষ আঙুল।
তাকালেই মনে হয় বিপরীত চোখে চেয়ে আছো,
সমর্পন ফিরে যাচ্ছে নগ্ন পায়ে একাকী বিষাদ- ক্লান্ত
করুণ ছায়ার মতো ছায়া থেকে প্রতিচ্ছায়ে।
এলে মনে হয় তুমি কোনদিন আসতে পারোনি..

কুশল শুধালে মনে হয় তুমি আসোনি
পাশে বসলেও মনে হয় তুমি আসোনি।
করাঘাত শুনে মনে হয় তুমি এসেছো,
দুয়ার খুল্লেই মনে হয় তুমি আসোনি।
আসবে বললে মনে হয় অগ্রিম বিপদবার্তা,
আবহাওয়া সংকেত, আট, নয়, নিম্নচাপ, উত্তর, পশ্চিম-
এলে মনে হয় তুমি কোনদিন আসতে পারোনি।

চ'লে গেলে মনে হয় তুমি এসেছিলে,
চ'লে গেলে মনে হয় তুমি সমস্ত ভূবনে আছো।



করি মিত্রংনো অসিবু

অসিবু করি মিত্রংনো ঐগী!
নঙনা ইনাক্তা লাক্লগা খল্লি চত্খ্রবোয় থাপ্না, অথাপ্পদা,
অতৈগসু থাপ্নরকখি- থাপথোকখি আতিয়াগুম।
নাক্তা লাক্লগা নঙনা হোংদোকখি ইশিং-নুংশিত, প্রকৃতি
হোংদোকখি পৃথিবীগী শক্তম, বিষুবরেখা
অতিয়াদা নোঙগী মনম ফংঙি নঙগা ফঙনবদা।

নখুতনা শোক্লকপদা খনখি শোকত্রবোয়
নুংশি য়াওদ্রবা খুইজিল্লবা খুতনা পায়বগুম।
য়েঙকপদা ঐবু খল্লি য়েঙবিরক্তবগুম,
অওয়া-শুক্লবা মাইথোংদা চতখি নুংশি মরী ইবানিগী
অমুবা মীরুমগুম, মীরুমদগী মী- মীরুম।
লাক্লগা নঙনা খল্লি লাকখিদ্রবোই কৈদৌঙৈ..

ফরিবরা হঙলকপদা খল্লি লাকত্রিবোই নঙ,
নাক্তা ফম্লবদা খল্লি লাকত্রিবোই নঙ।
থোঙ নোম্লবদা খল্লি লাক্লবোই
থোং হাংবগা খল্লি লাকত্রবোই।
লাক্কনি হায়রকপদা নঙনা খল্লি অওয়া পাউদমগুম
আবহাওয়া সংকেত, নিপাল, মাপল, লো-প্রেসার, অওয়াং, নোংচুপ-
নঙনা লাক্লবদি খল্লি লাকপা ঙমদ্রিবোই কৈদৌঙৈ।

চত্খ্রগা নঙনা খল্লি লাক্লম্মি নঙ
চত্খ্রগা নঙনা খল্লি মলেম শিন থুংনা লৈরি নঙ।


[ভাষান্তর: শেরাম নিরঞ্জন]





পূর্নেন্দু পত্রী


কথোপকথন

: তুমি আজকাল বড় সিগারেট খাচ্ছ শুভঙ্কর।
: এখনি ছুঁড়ে ছেলে দিচ্ছি।
কিন্তু তার বদলে ?
: বড্ড হ্যাংলা। যেন খাওনি কখনো ?
: খেয়েছি।
কিন্তু আমার খিদের কাছে সেসব নস্যি।
কিন্তু কলকাতাকে এক খাবলায় চিবিয়ে খেতে পারি আমি।
আকাশটাকে ওমলেটের মতো চিরে চিরে
নক্ষত্রগুলোকে চিনে বাদামের মতো টুকটাক করে
পাহাড়গুলোকে পাপড় ভাজার মতো মড়মড়িয়ে
আর গ ঙ্গা ?
সে তো এক গ্লাস সরবত।
: থাক। খুব বীর পুরুষ।
: সত্যি তাই।
পৃথিবীর কাছে আমি এইরকমই ভয়ঙ্কর বিস্ফোরন।
কেবল তোমার কাছে এলেই দুধের বালক
কেবল তোমার কাছে এলেই ফুটপাতের নুলো ভিখারী
এক পয়সা, আধ পয়সা কিংবা এক টুকরো পাউরুটির বেশী
আর কিছু ছিনিয়ে নিতে পারিনা।
: মিথ্যুক।
: কেন ?
: সেদিন আমার সর্বাঙ্গের শাড়ী ধরে টান মারনি ?
: হতে পারে।
ভিখারীদের কি ডাকাত হতে ইচ্ছে করেনা একদিনও ?



ওয়ারী শান্নবা

: নঙ হন্দক মরকসে য়াম্না হাক্না সিগারেট থক্লে শুভঙ্কর।
: হৌজিকমক লংথোকখ্রগে।
অদুগা মদুগী মহুত্তি ?
: লাইমসু ওক্তেদা। চাবা থকপগাক ফঙদ্রবা নঙবু ?
: ফংঙি।
অদুবু ঐগী অরাম্বগী নাক্তাদি মদু'পুম্বা কৈশু নত্তে।
কলকাতা'সিবু ঐদি খুবাম'মদা লোইনা চাথোকপা ঙম্মি।
অতিয়া'সিবুনা ওমলেট তৌনা মচেত্ মচেত্ শেদত্ত্তুনা
থওয়ানমিচাক ময়াম্বুনা চিনা বাদাম মরুগুম
চীংশাং পরেংবুনা ক্রেম ক্রেম লাউনা পাপরদৌনা
অদুগা গঙ্গা ?
মাদি শরবত গ্লাস অমতনি।
: খংঙে খংঙে, য়াম্না থৌনা ফবনি নঙসে।
: তশেংনমক্কীসুনি।
মলেম অপুম্বদা ঐদি অসিমক্নি- অকি অখঙগী মশক।
নঙগী নাক্তা লাক্লগতনি ঐনা অঙাং অপিক ওইরিবা
নঙগী ননাক্তদি ঐসে লম্বী মপানগী মখুত্ ততলবা চাকনিবনি
অনা-মা, সিকি-মা নত্রগা তল মচেত্'মদগী হেন্না
করিসু মুন্দুনা লৌবা ঙমদ্রিবনি নঙোন্দগী।
: চিনথিবা।
: করিগী ?
: নহালতসু ঐগী হকচাংগী ফি পাইদুনা চিংবদুদি ?
: ও, অদুবুরো।
চাকনিবসু কৈদৌঙৈদসু ডাকাত ওইনিংঙকপা য়াদ্রাও ?


[ভাষান্তরঃ এ. কে. শেরাম]

মনিপুরি কবিতা (ভারত)

আদি উত্সভূমি মনিপুর ছাড়াও ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে মনিপুরি বসতি রয়েছে। রয়েছে তাদের সমৃদ্ধ এক সাহিত্য জগতও। সেরকমই ক'জন সমৃদ্ধ লেখকের কবিতার বাংলা অনুবাদসহ মূল কবিতা (মীতৈ লোন বা মনিপুরি ভাষা) এখানে পত্রস্থ করা হলো। কবিতাগুলো মুতুম অপু সিংহ সম্পাদিত দ্বি-মাত্রিক কবিতার বই 'এক বসন্তের ভালোবাসা' থেকে সংকলিত - মাইবম সাধন


লমাবম কমল সিংহ

বিশ্বপ্রেম

হে পাখংশা! বিজ্ঞানবু হৈরবা
করিগীনো মন্ত্রবু থাজদ্রিবা
পাল্লবদা নুংশিবগী মন্ত্রনা
মীত্ তাঙগনি পাঙনা পাঙনা
না পঙগনি তা-না তা-না
পঙগনি লৌশিং থৌনা থৌনা।
নৈম হুদুনসু মলয়ানা
'নুংশি' 'নুংশি' হায়নবগুম্না
পুক্নিং হুদুনাসু নুংশিবা মীনা
মখনগনি নুংশি নুংশি হায়না।
তিঙ্খং পাল্লবসু কেতকীনা
মনম নুংশিবগুম অহোইনা
নিংঙাই চাউর চাউরগা নুংশিবনা
'নুংশি' মখনগনি থোয়না হেন্না।
চৈ-থাংলবসু নুংশিবা মীনা
হীদাক অখাবা চাবগুম্না
হেন্না থিংখক্কনি নশাদু
হেন্না নুঙায়গনি পুক্নিংদু।
নাবুথী শারে মনুংশিনি
শুগতলে নোক্লক্লে নীংগনি।
সনরীক পরেং নুংশিবগী
হক্তোক্তুনা নুংশিবগী ঙকশমদগী
য়েক্নবদা শিবিবা গুম্লবা
প্রেমিক কৌই পুপাদু অশেংবা।



বিশ্বপ্রেম

বিজ্ঞান বিশারদ হে যুবকবুন্দ !
কেন মন্ত্রকে বিশ্বাস করো না ?
প্রেমের মন্ত্রে যদি বাঁধা পড়ো কোনোদিন
তাহলে চোখ থাকলেও অন্ধ হয়ে যাবে
বধির হবে কানে শুনেও
বুদ্ধিমান হয়েও বোকা বনে যাবে।
বাতাস চুরি করে নিয়ে যায় ফুলের সৌরভ
তবুও যেমন বলি কি মধুর গন্ধ !
তেমনি প্রিয়জন যদি চুরি করে মন
তবু বলি প্রিয় সে- ভালোবাসি, ভালোবাসি।
কেতকী ফুলের কাঁটা যতোই বাড়ুক
সুগন্ধ তার ছড়িয়ে পড়বেই
যতোই মান অভিমান করুক প্রিয়জন
তবু আজো প্রিয় মনে হবে তাকে
মনরে মানুষ যদি বকুনিও দেয়
কোনো তেতো ওষধের ক্রিয়ার মতো
শরীর আরো সতেজ হবে
নিমেষে চাঙ্গা হবে মন।
রাগ যদি করে তাতেও ভালোই লাগবে
ভেংচি কাটলে মনে হবে হাসি।
প্রিয়জনের কন্ঠ থেকে
খুলে নিয়ে সোনার হার
পরিয়ে যে দিতে পারে শত্রুর কন্ঠে
সে'ইতো প্রকৃত প্রেমিক।


[ভাষান্তর: এ. কে. শেরাম]






রঘু লৈশাংথেম


য়ুগী নিশা নত্তে


ঐনা মতম খুদিং ঙাউরিবা
য়ুগী নিশা নত্তে
ঐগী পীক্লবা লমদমসিগী নিশাদনি।

ঐগী খোঙচতসিদা
নিশা অসে খক থাদোকপা ঙমদে
মতম খূদিং
অদুনা ঐনা ঙাউরি
নিশাসিনা ঐবু হিংহল্লিবানি।

ঐগী পীক্লবা লমদমসি
করিগী অমম্বনা অসুম অসুম কোয়শিল্লকলিবা
খুন্নায় অসিনা করিগী পী শিন্থরিবা মীতলুশিংদা
ওয়াহং অসিদনি
ঐনা নিশাসিদা ঙাউরিবা।

ঙসিদি ঐনা ইরি নিশাসিদা
অঙাংবা ওয়াহৈগী শৈরেংশিং
ঐগী পিক্লবা লমদমসিগীদমক।

অদুনা
ঐনা মতম খুদিং ঙাউরিবা
য়ুগী নিশা নত্তে
ঐগী পীক্লবা লমদমসিগী নিশাদনি।




মদের নেশায় নয়

আমি যে সব সময় নেশাগ্রস্ত থাকি
তা মদের নেশায় নয়
আমার এই ছোট্র দেশটার নেশায়।

আমার এই জীবনে
এই নেশাকে ছাড়তে পারিনি
কখনোই
তাইতো আমি আজও নেশার ঘোরে
আর এই নেশায় আমাকে বাচিয়ে রাখে।

আমার এই ছোট্র দেশটি
কেন ক্রমশঃ ঢেকে যাচ্ছে ঘন অন্ধকারে
কেন মানুষগুলোর চোখে অশ্রুর ধারা
এই প্রশ্নেরই জবাব
খুজতে খুজতে আমি নেশাগ্রস্ত।

আজ এই নেশার ঘোরেই
আমার এই ছোট্র দেশটির জন্যেই
কবিতা লিখছি আমি রক্তের অক্ষরে।

আমি যে সব সময় নেশাগ্রস্ত থাকি
তা মদের নেশায় নয়
আমার এই ছোট্র দেশটির নেশায়।


[ভাষান্তর: এ. কে. শেরাম]






খৈরুদ্দিন চৌধুরী


বাংলা নহাক্কী স্মৃতিদা


বাংলাগী মণিপুরী থম্মোয়গী কুচু শঙলবা
হে কৃষ্ণচুড়া - তঙাংলবী বসন্তগী লৈরাং।
ঙসিদি নহাক্না নোকমী নোকমী ওকশিনবিরে ঐবু
নহাক্কী শংবান্নরবা খুঙ্গংগী নিংথিবীদা।
মীত্স্না থন্না উজরকখি নিংথিবী নহাকপু
থম্বালনা লৈতেংবা থারিক থানা ঙাল্লবা
হিজোল পরেংনা লৈতেংবা পাতশিংদো।

শকহেনবী নহাক্কী নিংথিবী তুরেলশিংদা
ভাটিয়ালী ঈশৈনা নিলহৌবদো
পদ্মাগী তোর্ব্বান্দা নুমিত্ য়ুংবা মতমদা
উমায়বিদুনা কপহৌবদো মরুপ কায়নবদা
ঙসিসু ঐগী থম্মোয়নুঙদা খোন্থাং য়ৈরী
লোয়বা নাইদ্রবা ট্র্যাজেডিগী সুরদা।
দোয়েল, ডাহুক, ঙারাকপীশিংনা
শালুক, শাপলা, হিজোল মরক্তা,
নহাক্কী পাত্ত্তা, তুরেলগী তোর্ব্বান্দা
শকহৌবা ঈশৈগী মখল মথেলদো
পুন্সিগী হরাওবগী লৈশাং তমহৌদ্রবদো
ঐগী পুন্সিগী প্রেরণাগী লোয়নায়দ্রবা ইফুতনি।



বাংলা তোমার স্মৃতিতে

বাংলার মণিপুরী হৃদয়ের প্রাণরসে রঞ্জিত
হে কৃষ্ণচুড়া - বর্ণিল বসন্তের রক্তলাল কুসুম।
আমাকে স্বাগত জানালে তুমি মিষ্টি হাসির সাদর সম্ভাষনে
তোমার নিবিড় জনপদের শ্যামল সৌন্দর্যে।
দু'চোখ ভরে আমি দেখেছি তোমাকে, হে সুন্দরী
দেখেছি তোমার পদ্ম, শাপলা আর শালুকে ভরা
হিজল বৃক্ষের সারিতে সোভিত বিল আর হাওড়।

তোমার ধীর প্রবাহিনী নদীতে, হে সুন্দরী বাংলা
ভাটিয়ালী সঙ্গীতের যে সুর বাজে
বিষন্ন দুপুরে, পদ্মার তীরে তীরে
সঙ্গীহারা সোনালী ডানার যে চিল
কেদে কেদে ভাসায়েছে বুক
আজো তার কান্নার সুর বেদনার অনন্ত আবহে
আমার হৃদয়কে নিয়ত বিধূর করে
তোমার বিলে-হাওড়ে নদীর পারে
দোয়েল, ডাহুক আর মাছরাঙা পাখি
শালুক, শাপলা, হিজলের ডালে সে সুরের অমুতধারায়
জীবনের আনন্দের ফুল ফুটিয়েছে
তার সবকিছু হয়ে আছে
আমার জন্য অনুপ্রেরণার অনন্ত উত্স।



[ভাষান্তর: এ. কে. শেরাম]

বাংলাদেশের মনিপুরি কবিতা_০৩

হামোম প্রমোদ

তৃতীয় বিশ্বের শীর্ণ গরু
(থার্ড ওয়াল্ডগী ষন য়াঙ্গংবী)

এশিয়ার নাড়ার উপর মূমূর্ষু দাঁড়িয়ে
আফ্রিকার চৌচির মাঠে নেতিয়ে পড়ে আছে
তৃতীয় বিশ্বের হা-ভাতে শীর্ণ গরু

হিংসা ঈর্ষা অভাব নিয়ে
অসহায় চেয়ে থাকা ছাড়া
বলতেও পারে না হায় ডাকতেও পারে না
শুকনো নাড়া ছাড়া সব ধান কেটে নিয়ে
দম্ভ দেখাচ্ছো পশ্চিমা শাদা প্রাণী।

ঘাসহীন ধুলোবালির ওপর
পূর্ণ খুঁটা পোঁতা
সাত হাত দড়িতে বেধেঁ
উচ্ছিষ্ট নাড়ার রিলিফ...

গলায় দড়ি, পায়ে শিকল, খেলছো ভালো।
চাও কি তুমি
শুকনো চামড়া
শুভ্র দুধ, নাকি মাংস ছাড়া দেহ ?

তৃতীয় বিশ্বের শীর্ণ গরুর শব্দহীন প্রশ্নগুলো
অশ্রু হয়ে ঝরে
কেউ তা দেখে না।




[অনুবাদ - কন্থৌজম সুরঞ্জিত]

বাংলাদেশের মনিপুরি কবিতা_০২

মনিপুরি ভাষায় 'ওগ্রি হাংগেল' আর বাংলায় গীতিকবিতা একই অর্থময়তার দ্যোতক। পৃথিবীর আদি মানবগোষ্ঠিগুলোর সাধারণ বৈশিষ্ট্যের মতো মনিপুরিদের কাছেও গীতিকবিতা ছিল হৃদয় ও চেতনাবৃত্তি প্রকাশের প্রাথমিক বাহন। মনিপুরি রাজারা সিংহাসন আরোহণের সময় ওগ্রি হাংগেল পরিবেশনের মাধ্যমে সূর্যের পুজো দিতেন। সূর্য ছিল তাদের আরাধ্য দেবতা। রাজপুরুষরা চাইতেন সূর্যের মতোই চিরসমুজ্জ্বল আর প্রভাময় থাকতে। 'ওগ্রি হাংগেল' লিখিত নয়, মুখে-মুখে রচিত সাহিত্য। কথা ও সুরের মায়াজালে মনিপুরি লোকায়ত সমাজে এখনো এর জের আছে।

বাংলাদেশে মনিপুরিরা বসতি স্থাপন করে প্রায় ২০০ বছর আগে। ১৮১৯-১৮২৬ সাল পর্যন্ত স্থায়ী মনিপুর-বার্মা যুদ্ধের সময় বর্মীদের ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের শিকার হয়ে মনিপুরিদের একটা অংশ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। প্রথানত সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জে এদের বসবাস রয়েছে।

বৈষ্ণব ধর্ম গ্রহণের আগে মনিপুরিদের সাধারণ পরিচিতি ছিল 'মেইতেই' এবং আদিভূমির (বর্তমান ভারতের মনিপুর রাজ্য) নাম ছিল 'মেইতেই লেইপাক'। আঠারো শতকে মনিপুররাজ পামহৈবার (দরিদ্রদরদি বলে যার আরেক নাম গরিবে নেওয়াজ) সময় মহাভারতের একটি কাহিনীর সূত্রে এর নতুন নাম হয় 'মনিপুর' আর আদিবাসীরা 'মনিপুরি'।

গত শতাব্দির সত্তর দশকের মধ্যপর্বে বাংলাদেশে মনিপুরি সাহিত্যের চর্চা শুরু। দীপান্বিতা, মৈরা, শজিবু, ইপোম, ওগ্রি প্রভৃতি সাহিত্যপত্র ও ছোট কাগজের প্রকাশনায় এ চর্চার ধারা এখন অনেক বেগবান, সংহত। মনিপুরি তরুণদের অনেকেই মাতৃভাষার পাশাপাশি বাংলায়ও সাহিত্যচর্চা করছেন।




এ কে শেরাম

অন্ধকার

অন্ধকারে ভয় খুব -
হৃদয়হীন জল্লাদ ও প্রেতাত্মাকেও অতো নয় ;
দৃষ্টিভঙ্গির পেচানো অন্ধকার
কৌশলের অন্ধকার
চেতনা ও মননের অন্ধকার -

সহজ চলাচলেও ব্যাপ্ত হয়ে আছে আজ !

এ মিলিত তিমির ঘনীভূতরুপে
ভয়ানক বিভীষিকা আনে চারপাশে ;
তুচ্ছ কচুরিপানাও এই অন্ধকারে
ফোস করে-ওঠা যেনো ভীতির দেবতাঃ 'লাই' !




শেরাম নিরঞ্জন

আত্মপ্রতিকৃতি


নতুন-নতুন পথে ছুটছে আমার
চেতনার দূর্বার স্কুটার -
আর বাস্তবে মানুষ আমি এক গ্লানিময়
নত হয়ে
চলি ভয়ার্ত, বিবশ !

পৃথিবীটা পুতিগন্ধময় -
চিনেছি ভালোই ঘৃণিত সমাজ
এই হৃদয়হীন স্বজনদেরও ;

আর নিজের বলয়ে
ওতপ্রোতভাবে জড়িত এ আমাকে তো
চিনেছি সকলের আগেই !




সনাতন হামোম

তুমি


তুমি সুন্দর ঝরিনি তাই বৃষ্টি হয়ে
ঝড়ো বাতাসের মতো বইনি তোমার পাশ ঘেসে
পুজোর সময় তোমার হাতের আলোকিত বর্তিকায়
নাচের বিনম্র তালে
টেনেছ ভাটির স্রোতের মতন -
পাশে বৃষ্টিভেজা কাকের দুর্দশা দেখে
মন কেদেছিল, তবু
চাহনির মর্তবা বুঝবো বলে ফিরেও চাইনি
ওই বেচারার দিকে ;

রাসপূর্ণিমার মেলায় অমন অভিমানী চোখ
হলুদাভ ফনেকে আবৃত অধোদেশ
উত্কন্ঠিত এলোচুল
গলায় সোনার হার -

অজান্তে দিয়েছে কন্ঠে বুনোস্বভাবের এই গান !




কন্থৌজম সুরঞ্জিত

জোনাক চোখের ভোর

দাদিমার
স্মৃতিগল্পের ভেতর আকাঁবাঁকা পথে
ধীরে-ধীরে প্রসারিত
এইসব খুব দরদিয়া অক্টোপাস;

সময়ের বেপোয়ারা গতি
যখন গোগ্রাসে খেয়ে নিচ্ছে ওদের শরীর নিরাই-নিভৃতে,
জোনাকের নম্র আলো সান্ত্বনার বকুল ঝরানো সম্ভাষণ আনে
সে-সময়
আরো একটু সটান হয়ে
ঘুমোবার চেষ্টা করতেই
কে আমাকে জাগায় রাতের রিকশায়
ঝুলে থাকা
অতন্দ্র হারিকেনের মতো!

ভোরের প্রভায় তা তা থৈ থৈ করা
লতায় জড়ানো কুঁড়িটির মতো
ওড়িশি নৃত্যরত রাত_

চোখে যার সকালের মলিন কাজল!





থোঙাম সনজয়

বাজার দেবী

যুদ্ধে-যুদ্ধে ভরা এ জীবনে অবশেষে জানলামঃ
অবিশ্বাসের এ ঘোর লড়াইয়ে তুমিও আমার শত্রু -
বুকের বা-পাশে মনে হয়
পেন্ডুলামের মতোই দুলছে বেদনা ;

এভাবে বাচবো কতদিন খাচাবন্দি পশুর সমান !

তপ্ত কড়াইয়ে খৈ-এর আর কীবা পরিণতি
জ্বলন্ত চুলোয় কিছুক্ষণ লাল হওয়া ছাড়া ?

যখন সে কিনেছে আমাকে - করেছে মুক্তির পথও রুদ্ধ
তখন কী আর করণীয়
বাজার দেবীর নিজস্ব গোলাম হয়ে যাওয়া ছাড়া !






পারী চিংথাম

কুকুর


আজকের দিনটা দেখছি খুব বেদনামথিত
কেমন নির্বাক হয়ে গেছি, অন্ধ হয়ে যাচ্ছি..

তবু চিটে-যাওয়া স্বপ্ননারীর কাহিনী
দেখতে পাচ্ছি এ দীর্ঘশ্বাসেও !

কথা দিয়েছি যদিও গতকালই শেষ
তবু আজকেও আবার খুব দেখতে ইচ্ছে করছে ;

ভাবিঃ চোখটাকে তুষ্ট করি একবার
পরক্ষণে নিবৃত্তির কঠিন জ্বলুনি দিয়ে
নেড়েছি ওদের..

এখন আমার আর ফাস ছাড়া গতি নেই কোনো..





হাফিজ রশিদ খান সম্পাদিত 'অরণ্যের সুবাসিত ফুলঃ আদিবাসী কবিতার নির্বাচিত সংকলন' গ্রন্থ থেকে। প্রকাশকালঃ ফেব্রুয়ারী ২০০৯, প্রকাশকঃ পাঠসূত্র, ঢাকা।

বাংলাদেশের মনিপুরি কবিতা_০১

'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বাংলা ভাষার ন্যায় পৃথিবীর সকল ভাষা যেন পায় শ্রদ্ধা ও সম্মান' - এই স্লোগানকে সামনে রেখেই ফেব্রুয়ারী ২০০১ এ প্রকাশিত হয়েছিল এক বসন্তের ভালোবাসা। একটি দ্বি-মাত্রিক কাব্যগ্রন্থ। মুতুম অপু সিংহ সম্পাদিত দ্বিমাত্রিক কবিতার গ্রন্থ এক বসন্তের ভালোবাসা কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত কিছু কবিতা এখানে দেয়া হলো। কবিতাগুলো মনিপুরি ভাষা অর্থাত্ মীতৈ লোন বা মৈতৈ লোন থেকে বাংলায় অনূদিত। আর এ অনুবাদের কঠিনতম কাজটি করেছেন কবিরা নিজে, তবে কবি হামোম প্রমোদ এর কবিতাটি শেরাম নিরঞ্জন কর্তৃক অনূদিত- মাইবম সাধন



এ. কে. শেরাম

এক এক করে ভেঙ্গে পড়ে সবকিছু

আমার বাড়ীর কাছেই
সেই কোন প্রাচীন কালের একটা সেতু ছিলো।
একদিন রাত্রির পৌঢ় প্রহরে
সকলের অজ্ঞাতসারে ভেঙ্গে পড়লো সেই সেতু।
আমাদের বাড়ীর বাম পাশেই
আমাদের কোন প্রপিতামহের বানানো
পরিত্যক্ত একটি প্রাচীন ইমারতও ছিলো,
শৈশবের লুকোচুরি খেলার স্থান
পুরনো সেই ইমারতের ক্ষয়িত শরীর থেকে
এখন কেবলি লাবন্য খসে পড়ে,
এখানে ওখানে উত্কন্ঠ ভেসে ওঠে
শ্যাওলা ধরা তার নীল নীল শিরা উপশিরা ;
জরাজীর্ণ সেই ঘর এখন পোকা মাকড়ের বসত বাড়ী
কুকুর বেড়ালও সেখানে যায়না সহজে।
একদিন সকলের বিস্মিত দৃষ্টির সামনে
সশব্দ হুংকারে ভেঙ্গে পড়লো সেই জীর্ণ ইমারত।
আমাদের গ্রামের পাশে বহমান
রাত্রির মতো রহস্যময়ী যে নদী
ভরা পেটেই হয়তোবা সে ক্ষুধার্ত হয় বেশী,
তাইতো সে বর্ষার ভরা প্লাবনেই
ক্ষুধার বিশাল ব্যদিত মুখে
গ্রাস করে দুপারের খন্ড খন্ড মাটি।
ভাঙ্গনের এই ভয়াল শব্দে
সচকিত হয়ে চমকে চমকে ওঠে
রাত্রির বুকে বিশ্রামরত নির্বিরোধ গ্রাম।

কেনো জানিনা
এক এক করে সবকিছু ভেঙ্গে পড়ে
ভেঙ্গে পড়ে প্রকৃতি, চাঁদ ও নক্ষত্ররাজি
টুকরো টুকরো হয়ে যায় পৃথিবী, আকাশ, জল ও বায়ু
বৃদ্ধ-যুবা, নারী-পুরুষ, সাদা-কালো
কেউ বাদ যায়না ভাঙ্গনের এই সর্বভুক ক্ষুধার গ্রাস থেকে।
এক এক করে ভেঙ্গে পড়ে সবকিছু
মানুষের হৃদয়ের সেতু
বিশ্বাসের ঘর
জীবনের নদী

কিন্ত তারপরও
গোপনে গোপনে একাকী পালিয়ে
হয়তোবা এখনও নিজেকে বাঁচিয়ে রাখে ভালোবাসা,
হয়তোবা ভাঙ্গনের এই করাল গ্রাসে
এখনও পড়েনি ভালোবাসার ঘর।
এক এক করে ভেঙ্গে পড়ার এই সর্বগ্রাসী সময়ে
এটুকুইতো আমার প্রাণদ ভরসা
আমি বাচিয়ে রাখতে চাইও শুধু এটুকুই
আমার বেঁচে থাকার ভিত্তিভূমি হিসেবে।


অমমম তৌনা কিন্থরক্লি পুম্নমক

ঐখোয়গী য়ুম মনাক্তা
মল্লবা থোং মচামা লৈরম্মি।
নোংমদি নুমিদাংগী অথেংবদা
কনা খঙহৌদনা কিন্থরম্মি থোং অদো।
ইপুধৌনা শারম্বনি হায়নবা
পাক্কা শং অমখকসু লৈরম্মি
ঐখোয়গী য়ুমগী ওই থংবা নাকন্দা।
অঙাং ওইরিঙৈগী কেকু লোত্পগী শান্নফম
মল্ল-মোতলবা শং অদুগী হকচাং কয়াত্
পাতল-পুম্লদুনা মচেত্ মচেত্ কেল্লম্মি
মফম মফমদা ফাউগত্তুনা লৈরম্মি
হিজং কারবা মা'গী শংত্রিক শংলবা শিংলিসিং।
মোং মোং ওইরবা তিল কাংগী লৈফম অদো
হৌজিক্তি হুই হৌদোং ফাউবা পঙনা চংদ্রে।
অদুবু নোংমদি মখোল হৌনা কিন্থরকখি শং অদো
খংপ্রেক খংলবা মীয়াম পুম্বানা চেনশিন্দুনা য়েংনৈ ংক্না।
ঐখোয় য়ুমগী মনাক্তা চেল্লিবী
নুমিদাংগুম লমচত্ লেপত্রবী তুরেল অদো
মবুক থল্ল থল্লগা অরাম খৌরাংবা হেনবরা করিনো
নোংজুগী মতমদা মবুক পাত্থনা চেল্ল মতমদা
চরাম চদত্নবগী লাউরবা মখা অদু কাথোক্তুনা
য়োতশিল্লম্মি লৈরায় অনীগী লৈবাক মতুম মতুম।
লৈরায় কিন্থবগী হৌর মখোলদা
নুমিদাংগী তম্পাক্তা তুমখুন তাল্লিবা লৈকায় অদো
খংপ্রেক খংপ্রেক খংলম্মি।

করিগীনো খঙদে
অমমম তৌদুনা কিন্থরক্লি পুম্নমক।
কিন্থরক্লি মহৌশা লাইরেম্বী, থাজ, থওয়ানমিচাক
মচেত্ মচেত্ তারক্লি মালেম, আতিয়া, ঈশিং, নুংশিত্
অহল-নহা, নুপী-নিপা, অমুবা-অঙৌবা
অমত্তা চিত্থদে কিন্থরকপগী নোংলৈ নুংশিত্ত্তগী।
অমমম তৌদুনা কিন্থরক্লি পুম্নমক
মীওইবগী থম্মোয়গী থোং
থাজবগী য়ুম
অদুবু হৌজিক ফাউবদা
নুংশিবতনি লোন্না কোয়চেন চেন্দুনা
মশাবু কঞ্জরিবরা করিনো
নুংশিবগী য়ুমতদি
কিন্থবগী করাম্লবা খরাও তাদ্রিমাল্লে হৌজিকসু।
মথং মথং পুম্নমকনা কিন্থরক্লিবা মতমসিদা
মসিমতংদনি ঐগী পেঞ্জবা
মসিমতংনি ঐনা কঞ্জনিংঙিবসু
ঐগী হিংনা লৈবগী য়ুম্ফম ওইননবা।




হামোম প্রমোদ

বিপ্রতীপ

'বলেছিলে ভুলবোনা এ জীবনে আমরা আমাদের
প্রতিজ্ঞা করেছিলে ভালোবাসার সুতোয় বাঁধব দুজন'
শুয়ে শুয়ে ভাবি আমি সেই অচল শপথের কথা
হৃদয়ের গভীর খচখচে করে ওঠে এক অচেনা ব্যথা

একদিন আমি বলেছিলাম লক্ষী-সরস্বতী
চন্ডী-বেহুলার ধারা তুমি-তুমিও বলেছিলে
রাধা-কৃষ্ণ, খম্বা-থোইবীর অমর কাহিনী
কিন্ত আজ রাধা-কৃষ্ণে, খম্বা-থোইবীতে দুরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে ক্রমশঃ
চেতনার চারিদিকে এক রহস্যময়ী পাপেটের ওড়াওড়ি
সামনে দাঁড়িয়ে আছে দুরন্ত এক মহিষ
হিংস্র কুকুরের গর্জন ভেসে আসে ইথারে ইথারে
পলায়নপর মা কালীর ভুলের মাশুল দিচ্ছে রক্তাক্ত জিহ্বা
অর্থাত্ কোথা থেকে যেনো পালিয়ে এলো সম্পূর্ণ বিবস্ত্র হয়ে
সীতা, দ্রোপদী, মাইনু, পেমচা, এই উন্মুক্ত ময়দানে
আর অন্ধ গহ্বরে আত্মধিক্কারে হাতড়াতে থাকে
দেবরাজ ইন্দ্র, জিউস, পাখংবা, মহাদেব
রাবন, দূর্যোধন আর নোংবানের দু'চোখ অশ্রুসিক্ত আজ
ক্লীওপেট্রা, মোনালিসা, শন্দ্রেম্বীর হাসিতে প্রশান্তি খুঁজতে গিয়ে দেখি
ছোপ ছোপ রক্তের রঞ্জিত হয়ে আছে স্তনাগ্র থেকে নাভিমূল

কে তুমি বসে আছো পুষ্পরথে ?
হৃদয়ের স্পন্দনে তুমি কি বিচলিত নও ?
একবার তাকিয়ে দেখো চেতনার শার্সিতে
বলে যাও একবার কে ?

আমি ভঙ্গি পরিবর্তন করে শুয়ে থাকি পুনরায়।



ওন্ন-তৈনবা

'কাউথোক্নরোইসি হাইনখিবদায়নে নঙ-এ
মপোক অমা ততনা-থানরোই ওয়াশকখি ইবানী'
লোংখ্রাক লোংনা হিপ্লগা খনখি ইদোমতা
থম্মোয়নুংদা ফাউরকখি অকনবা চৈনা অমা

নোংমা হাইখি ঐনা লক্ষী-সরস্বতী চন্ড-বেহুলাগী ধারানি নঙসে
রাধা-কৃষ্ণ খম্বা-থোইবী পনখি নঙসু নোংমা
অদুবু থাপতোক্নখ্রে ঙসিদি রাধাগা কৃষ্ণগা, খম্বাগা-থোইবীগা
লাইফদিবী অমা কোই পাই পাইখি ইমাংদা
নারেং হুত্তবা ইরোয়লাবা অমা লেপখি মাংদা
খাক্ন খাক্ন খোংখি হুই লাবা অমা
চেনফম খংদ্রবা কালী মরৈদু চিকশিল্লী
সীতা, দ্রোপদী, মাইনু পেমচা কদোমদগীনো
মফি মরোল য়াওদনা লমজাওসিদা
লাইনিংথৌ ইন্দ্র, জিউস, পাখংবা, মহাদেব
ওন-থোয়না লাক্নরি লৈনাং কফুত্ মরকসিদা
পীরাং শিন্থরকখি রাবন, দূর্যোধন, নোংবানগী মীতলুদা
ক্লীওপেট্রা, মোনালিসা, শন্দ্রেম্বীগী নকিফেত্ তৌবা মাইথোং
ঈ-চদুম চদুম খোমজিন্দগী খোইদৌ শিন থুংনা

লৈগী দোলাইদা ফম্লীবা নঙবু কনানো ?
থম্মোয়গী তান্থা ফাউদবরা নঙদি ?
অমুক্তং য়েংলম্মু কৈদৌগে মীংশেলদা ওইরবসু
হায়রম্মু ওন্থোক্তুনা নমায়দো- কনানো ?

লোংলম্বা ঐ উপশিল্লকই খঙহৌদনা।




শেরাম নিরঞ্জন

অদাহ্য হৃদয় পোড়ে

দু'হাতে স্বপ্ন সরাতে সরাতে এগিয়ে যায় সে
তার পায়ে লুটিয়ে পড়ে জ্যোত্স্নার অন্ধকার
লাবন্য উপচে পড়ে জ্যোত্স্নার দীপ্তিতে
সরলরেখা হয়ে যায় জীবনের জটিল কম্পোজিশন

সে,
সন্ধ্যামালতীর মালা গাঁথে
তার চোখের পল্লবে নাচে নীল তারার বুটিদার আকাশ

এবং হঠাত্
পূর্ণ চাঁদ ভেঙ্গে ভেঙ্গে
দ্বি-খন্ড
ত্রি-খন্ড
চর্তুখন্ড

অতঃপর চৈত্রের পাতা ঝরার শব্দ
তার চোখে ভাসে গান্ধারীর শত স্নানের মৃত্যুশোক
স্মৃতিদীর্ণ ট্রয় তার কাঁধে রাখে হাত

অদাহ্য হৃদয় পোড়ে-পোড়েনা ভালোবাসা তবু..



চাকহৈদ্রবা থম্মোয় চাকথেকখি

মখুত্ অনিনা মঙলান ময়াম ইন্থোক্তুনা চখতলি মাংদাঃ
মহাক্কী চরণদা ওন থোয়দুনা খাংঙি থাবলগী অমম্বা
থাজ মঙাল য়ৈয়রকই মায়থোংদা
উবা ফঙখি চমম্নরবা পুন্সিগী নিংথিরবা শক্তম।

মহাক,
লৈপরেং লেংলম্মি থাবল্লৈগী
মহাক্কী মীত্স্নাদা উবা ফঙখি
শংবান্নরবা থওয়ান মীচাক্কী মপাল নাইদ্রবা অতিয়া

অমসুং খুদক্তা-
থাজ থম্মোয় কিনখায়রকখি
মচেত্ অমা
মচেত্ অনি
মচেত্ অহুম
অদুদগী চৈত্রগী উ-না কেনবগী মখোল
গান্ধারীগী লৈখিদ্রবা মচা চা'মগী অওয়াবা
ট্রয়গী ওয়ারী ওইখি মহাক

চাকহৈদ্রবা থম্মোয় চাকথেকখি-চাকখিদে নুংশিবদি অদুবু..






এন. যোগেশ্বর অপু

জল পর্দার চোখ

হিম কুয়াশার চাদর জড়ালে প্রকৃতি
তোমার উষ্ণ উপস্থিতির জন্য তৃষ্ণার্ত হয়ে যাই
আদিগন্ত আলোয় উদ্ভাসিত হলে বিশ্বলোক
শিশিরের মতো ঝরে যায় জীবনের দিনগুলো
কালের গর্ভ হতে পূনর্জন্মের অস্থির প্রহরে
আমি একা, শুধু একা। নিঃসঙ্গ।

কেমন আছো অনিতা, আনন্দের সত্সঙ্গ হারা এদিনে
সময় এখন এ ঘরে স্থির, তবু শুনি
ঘড়ির কাঁটার মতো পথিকের পদধ্বনি
আসা-যাওয়ার ক্লান্তিহীন সময়ের সঙ্গীতে
কে যেনো জেগে ওঠে হৃদয়ে।
পর্দা ওড়ানো বসন্ত বাতাস চুপি চুপি
বলে যায় পথিক জীবনের গল্প।

অনিতা, কোলাহল এ সময়ে ভালো আছো ?
ঘুমহীন রাত্রির পোড়া চোখে
বন্দি সময়ের শয্যার এপাশ ওপাশ
খুলে বসি হৃদয়ের জানালা একা, নিশ্চুপ।
কল্পনার রঙের মতো দেয়ালের ছবিগুলো
ঝাপসা হয়ে আসে চোখে জল পর্দায়
এ জীবন যাত্রায়-
তোমার সেই জল পর্দার চোখের মতো।




ঈশিং ফিজংগী মিত্

লৈচিল নোংফাইগী ফিদুপ ইনখ্রগা প্রকৃতিনা
নঙগী নকশিল্লবা শউমগীদমক খৌরাংঙি য়াম্না
মঙালনা শিন-থুংনা ঙানথোয়রবা মলেম
লিক্লাগুম কেনখি পূন্সিগী নুমিতশিংদো
মতমগী পুক্কৈদগী পোকপগী পাখত্চাউরবা তাংলৌদা
ঐহাক ইদোম, ইদোমতা, কনা য়াওদনা।

করম লেল্লি অনিতা, নুঙায়বগা নুংশিবা লৈত্রবা নুমিতসিদা।
মতমদি হৌজিক ইমুংসিদা লেপ্লি, অদুবু তারি
ঘড়িগী খোঙথাংগুম্বা খোঙমীগী খোঙথাংখোল
লাকপা চত্পা লেপত্রবা মতমগী ঈশৈদা
য়াহৌরকই থম্মোয়দা কনা'মা।
য়ুখল পাইরবা বসন্তগী অঙাউবা নুংশিত্ত্তা তুমিন তুমিন
হায়রম্মী খোঙমী পুন্সি ওয়ারী।

অনিতা, নিল্লবা মতমসিদা য়াইফরিবরা ?
তুময়াদ্রবা নুংথাংগী চাক্লবা মিত্ত্তা
চতত্রবা মতমগী ফমদা ওন-থোয়না
হাংদোক্না ফম্লি থম্মোয়গী থোংনাউ, ইদোম, তুমিন।
ওয়াখলগী মচুগুম্লবা ফক্লাংগী মমিশিংদো
মকশিল্লকখি মিত্ত্তা ঈশিং ফিজংনা
চতলিবা পুন্সিসিদা
নঙগী অদুঙৈগী ঈশিং ফিজংগী মিত্গুম্না।






নামব্রম শংকর

কুয়াশাচ্ছন্ন ভালোবাসার গল্প

কুয়াশার চাদর জড়িয়ে
আবছা অন্ধকারেই রয়ে গেলে তুমি।

তোমাকে কি নামে ডাকি ?
আফ্রোদিতি, নুমিতলৈ নাকি সুস্মিতা।
ভেবে পাইনা কি করে জাগাই তোমাকে
সুখ স্বপ্নের অতল থেকে।
জানিনা কি করে বুঝাই তোমাকে
তৃষিতের এক চুমুক জল তুমি,
হৃদয়ের প্রান্তরে বুনো হাওয়া
রুগ্ন আকাশে একাদশীর চাঁদ।

ভালোবাসার অনুর্বর ক্ষেত্রে উদ্যমী চাষী আমি
শুষে নিতে চাই ভালোবাসার মাংশ-হৃতপিন্ড।

আমি সেই ক্ষণের অপেক্ষায়
একদিন সূর্যের প্রখর আলোয় কুয়াশা কেটে যাবে
আবছা অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসবে তুমি।




লৈচিলক্কি নুংশিওয়ারী


লৈচিনগী ইন্নফি ইনদুনা
মমজানবদুদা অসুম লৈখ্রে নঙদি।

নঙবু করি হায়না কৌগনি
অফ্রোদিতি, নুমিতলৈ নত্রগা সুস্মিতা ?
খনফম থোক্তে করম হায়না হৌদোক্কনি
নিংথিরবা মঙলানদা তাউদুনা লৈরিবা নঙবু।
খঙদে করম হায়না তাকপীগনি নঙবু
খৌরাংলবা অমগী ঈশিং চখোম অমনি নঙ
থম্মোয়গী লৌবুক্তা ঙাউরবা নুংশিতনি
মক্লবা অতিয়াদা থা মচেত্ অমনি।

নুংশিবগী কংলবা লৌবুক্তা থৌনা ফরবা লৌমীনি ঐসে
মহাও য়েংনিংঙি নুংশিবগী মশা মীহুল।

মতম অদো ঐ ঙায়জরি
নোংমদি নুমিত্কী ঙাংলবা মৈশানা লৈচিন হুমদোকখিনি
ঙানথোরক্তুনা উবা ফঙগনি নঙগী তশেংবা শক্তম।